বঙ্গবন্ধু’র ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকীতে ইউআইটিএস

ভার্চুয়াল কোর্ট সিস্টেমের উপর ইউআইটিএস-এ ওয়েবিনার
August 24, 2020
আমরা গভীর ভাবে শোকাহত
August 25, 2020
Show all

বঙ্গবন্ধু’র ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকীতে ইউআইটিএস

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘জাতীয় শোক দিবস ২০২০’ পালন করেছে ইউনিভার্সিটি অব ইরফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)। অদ্য ১৫ আগস্ট, ২০২০ খ্রি., শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীস্থ নিজস্ব ক্যাম্পাসে সামাজিক দ‚রত্ব নিশ্চিতপ‚র্বক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান-এর সভাপতিত্বে একচুয়াল ও ভার্চুয়াল মাধ্যমের সমন্বয়ে আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, জাতীয় শোক দিবস-এর শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। ৭৫-এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্য শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলই ছিল না, এর পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার গতিকে প্রতিরোধ করাসহ নানা দূরভিসন্ধি। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলো করে দেশকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছেন। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউআইটিএস বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও পিএইচপি ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সমাজসেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত আলহাজ্ব সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, ইউআইটিএস-এর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আ ন ম শরীফ, ইউআইটিএস বোর্ড অব ট্রাস্টিজের লিগ্যাল এডভাইজার এডভোকেট ড. মো. আব্দুল মান্নান ভ‚ঁইয়া, ইউআইটিএস-এর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মাজহারুল হক, লিবারেল আর্টস এন্ড সোস্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন সৈয়দা আফসানা ফেরদৌসী, প্রক্টর জনাব মো. তারিকুল ইসলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জনাব মোহাম্মদ কামরুল হাসান-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। এছাড়াও, দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে খতমে কুরআন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন-সহ সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন (অর্ধনমিত), কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর প্রবন্ধ ও কবিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে প্রকাশ করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।

 

মানুষের প্রতি ভালোবাসা না থাকা করোনার চেয়েও বড় ব্যাধি

বর্তমান বিশ্বে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা না থাকার বিষয়টি বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ তথা করোনার চেয়েও বড় ব্যাধি বলে মন্তব্য করেছেন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তার প্রতিষ্ঠা করা ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-ইউআইটিএসের ইংরেজি বিভাগের একটি ওয়েবিনারে যোগ দিয়ে সমাজসেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট এই শিল্পপতি একথা বলেন।

বৃহস্পতিবার রাতে ‘লিটেরেচার অ্যান্ড লাইফ’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে ছিলেন লেখক-অনুবাদক অ্যাকাডেমিশিয়ান ড. ফকরুল আলম। আলোচনায় অংশ নেন ইউআইটিএস উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খান, ইউআইটিএসের লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন সৈয়দা আফসানা ফেরদৌসী, ইংরেজি বিভাগের প্রধান নাঈমা আফরীন।

জীবন আর সাহিত্য অভিন্ন উল্লেখ করে সুফি মিজান বলেন, ‘সাহিত্যই জীবন আর জীবনই সাহিত্য। সাহিত্য হচ্ছে গোটা মানবজীবনের পুরোপুরি প্রতিচ্ছবি। সাহিত্য হচ্ছে দর্শন, সাহিত্য হচ্ছে গোটা সৃষ্টিলোকের নির্যাস।’

মানুষের জীবনের গভীরে যে সীমাহীন অসীম ক্ষমতা লুকানো থাকে সেই শক্তিকে কবি-সাহিত্যিকরাই জাগিয়ে তোলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভিতরের সেই শক্তি অলস হয়ে গেলে, তারা চিৎকার করে, কান্না করে─ তখন সেই ঘুমন্ত শক্তিকে কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক-শিল্পীরা জাগিয়ে তোলেন। তারা জীবন জয়ের মন্ত্রণা দিয়ে থাকেন। এ জন্য জীবনই সাহিত্য, সাহিত্যই জীবন।’

সুফি মিজান বলেন, ‘আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় ব্যাধি হলো মানুষ মানুষকে ভালোবাসে না; সম্মান করে না। বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের বিদ্যা হচ্ছে বিনয় নেই; আমাদের শিক্ষা হচ্ছে দীক্ষা নেই; কর্ম আছে কিন্তু নিষ্টা নেই। আমাদের জীবন আছে; জীবনের গভীরে কোনো ভালোবাসা নেই।’

প্রকৃত বিনয় সকল সদগুনের উৎস─ মহানবীর এই অমৃতবাণী স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেই আলোকে জীবনকে পরিচালিত করার ওপর তাগিদ দেন সুফিবাদে নিবিষ্ট এই শিল্পপতি।

 

 

কবি-সাহিত্যিকরা মানবতার জয়গানই গান

ইউআইটিএস উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘সাহিত্য আর জীবনকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। বড় বড় কবি সাহিত্যিকদের জীবনে আমরা দেখতে পাই তারা মানবতার জয়গানই গেয়েছেন। এই ওয়েবিনারে আলোচনা থেকে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় অনেক কিছুই রয়েছে। এমন আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই।’

শিক্ষা ব্যবস্থায় সাহিত্যকে যথাযথ স্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে

প্রেমের কবি হাফিজের একটি কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে ড. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘হাফিজ বলেছেন─ তোমার বন্ধুত্বের যে চারাগাছ, ভালোবাসার যে বৃক্ষ সারাজীবনই এটার গোড়াই পানি ঢালো, পরিচর্যা করো। আর শত্রুতার যে বীজ তা অংকুরোদগমের আগেই উপড়ে ফেলো। অন্যথায় এটি বড় হয়ে একসময় সমাজকে কলুষিত করবে, তোমার জীবনে বিপর্যয় ঢেকে আনবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের ভিতরে তিনটি বিষয় থাকা খুবই জরুরি। একটি হলো সৌন্দর্যবোধ, জ্ঞানের পিপাসা এবং ভালো কাজ করার ভালো কথা বলার ভালো কিছু করার চেতনা। এই তিনটি বিষয় আমাদের জীবনে অঙ্গাঙ্গী করে দিতে, জীবনকে যথার্থ উপলব্ধি করতে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাহিত্যকে যথাযথ স্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

টাইমলেস হওয়ার কারণে সাহিত্য জীবনের যথার্থ প্রতিচ্ছবি

বৈশ্বিক করোনা মহামারীকে মানুষের জন্য একটা দুঃসহ অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম বলেন, ‘আমরা সাহিত্যে দেখতে পাই কিভাবে অতীতের মহামারীগুলো মানবজীবনে প্রভাব ফেলে গেছে। অন্য মহামারীর মতো করোনাতেও আমরা সামাজিক দূরত্ব, দুশ্চিন্তা, ভয়ভীতি, হিরোইজমের বিষয়গুলো দেখতে পাচ্ছি। সাহিত্যে উঠে আসা মহামারীকালের জীবনের প্রতিচ্ছবি এখনকার জীবনেও দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ সাহিত্য হলো টাইমলেস ব্যাপার। ফলে একথা বলা মোটেও অমূলক নয় যে সাহিত্য জীবনের যথার্থ প্রতিচ্ছবি।’

দুঃসময়েও প্রতারণায় লিপ্ত একশ্রেণির মানুষ

ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি টি এস এলিয়টের ‘ওয়েস্টল্যান্ড’ কবিতার বিষয় টেনে সৈয়দা আফসানা ফেরদৌসী এই মহামারীকালের কঠিন পরিস্থিতির তুলনামূলক আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘করোনা আমাদের একটা দোটানায় ফেলে দিয়েছে। এই মহামারী জীবনের অনেক রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখিও করছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি সন্তানরা মা-বাবাকে ফেলে যাচ্ছে। একশ্রেণির মানুষ এই দুঃসময়েও মানুষের সঙ্গে প্রতারণায় লিপ্ত রয়েছে। এলিয়টের কবিতায়ও সমাজের এমন নেতিবাচকতা আমরা দেখতে পায়।’

ওয়েবিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান নাঈমা আফরীন বলেন, ‘করোনা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা এখন অনেকটাই ঘরবন্দি। তারা যেন এই মহামারী পরিস্থিতিতে সাহিত্যের সঙ্গে জীবনের যোগসূত্রগুলি মিলিয়ে নিতে পারে সেজন্য ওয়েবিনারে আলোচকদের বক্তব্য তাদেরকে ঋদ্ধ করবে বলে প্রত্যাশা রাখি।’

ইউআইটিএসের সহকারী প্রক্টর ও ইংরেজি প্রভাষক শুভ দাসের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচনা শেষে সপ্তাহব্যাপী নানা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।